ইসলাম নিয়ে বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথার কারণে অনেক আমেরিকান মনে করে থাকে যে, মানুষের প্রধান শত্রু হচ্ছে মুসলমানেরা। এটা অবশ্যই সত্য যে, গত মার্চে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প সিএনএনের প্রতিবেদক অ্যান্ডারসন কুপারকে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, ইসলাম আমাদেরকে ঘৃণা করে।’
ট্রাম্পের নবনিযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিনও একই মনোভাব দেখান। তিনি বলেছিলেন, ‘ইসলাম কোন ধর্ম নয় বরং এটি একটি ‘রাজনৈতিক মতাদর্শ’।’
এছাড়াও, ফ্লিন ইসলামকে একটি ‘মারাত্মক ক্যান্সার’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। মুসলিম বিরোধী এই অনুভূতি যথারীতি রাজনীতির বাইরেও বিদ্যমান রয়েছে।
‘রিয়েল টাইম উইদ বিল মাহের’ (এইচবিও) এর উপস্থাপক বিল মাহের বলেছিলেন, ‘কুরআন একটি ঘৃণাপূর্ণ গ্রন্থ।’
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভায় নিয়োগপ্রাপ্ত রিপাবলিকান পার্টির কয়েকজন সদস্য এবং অন্যান্য আরো কয়েকজন চরমভাবে ‘মুসলিমবিরোধী চরমপন্থী’। তাদের ইসলামভীতি নীতির প্রতি জনসমর্থন লাভের জন্য তারা সবাই মুসলিম বিদ্বেষ এবং ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে। যদিও দুর্ভাগ্যবশত, তারা এতে সফল হয়েছে।
২০১৫ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, আমেরিকানদের ২৮ শতাংশ ইসলামের প্রতি কিছুটা ‘প্রতিকূল মনোভাব’ পোষণ করেন এবং ২৭ শতাংশ ‘চরম প্রতিকূল’ মনোভাব পোষণ করে। যদিও আমেরিকানদের ৮৭ শতাংশ মানুষ কখনো কোনো মসজিদ পরিদর্শন করেনি এবং জনসংখ্যার এক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ একক কোনো মুসলিম সম্পর্কে কিছুই জানেনা।
ইসলাম সম্পর্কে এই ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপ উৎঘাটিত করেছেন সারাহ হারভার্ড।
ইসলামের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে নারীরা ইসলামকে কেবল উন্নতই করেনি অধিকন্তু নারীদের কাছ থেকে ইসলাম উপকৃতও হয়েছে।
ইসলামে প্রথম ধর্মান্তরিত হন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রা.)। খাদিজা ছিলেন তার স্বামীর চেয়ে ১৫ বছরের বড় এবং তিনিই তাকে বিয়ের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ে আরবের সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তাদের অন্যতম এবং পুরুষ-শাসিত কর্মজীবনে তার উচ্চ মর্যাদা ছিল।
তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর ইসলাম প্রচারে একজন প্রধান আর্থিক পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তিনি তার সব অর্থ-সম্পদ সমাজের অসহায়দের জন্য ব্যয় করেন।
খাদিজার (রা.) কৃতিত্ব এবং স্বাধীনতা ইসলামের বৈপরীত্য নয়। মুসলিম-অধ্যুষিত অনেক দেশে একনায়কতন্ত্র এবং ধর্মীয়শাসনে নারীর প্রতি অত্যন্ত দমনমূলক আচরণ করা হয়। ইসলাম সহজাতভাবেই এর অনুমতি দিয়েছে বলে দাবি করা হলেও আসলে এটা সঠিক নয়।
বস্তুত, ইসলামে নারীকে আলাদা অধিকার দেয়া হয়েছে। বিয়ের ক্ষেত্রে, ইসলাম একজন নারীকে তার স্বামী বেছে নেয়ার অধিকারকে অনুমোদন করেছে। জোর করে বিয়ে দেয়া ধর্মীয় নীতির বাইরে। ইসলামে নারীর সম্পত্তি মালিকানার অধিকার দেয়া হয়েছে। এমনকি বিবাহবিচ্ছেদ পরেও স্ত্রী তার সমস্ত সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রয়েছে।
জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তর করতে পবিত্র কোরআনে বারণ করা হয়েছে।
ইসলামে অমুসলিমদের হয় ধর্মান্তর নয় মরতে বাধ্য করা হয় বলে বলা হয়ে থাকে যা সত্য নয়।
আসলে, কোরআনে (অধ্যায় দুই, আয়াত ২৫৬) এ ধরনের কাজকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘দ্বীনের ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’
ইসলামি বিশ্বাসে মুসলমানদেরকে ‘বাইবেল’ এবং ‘তাওরাতের’ প্রতি সম্মান দেখাতে বলা হয়েছে। যেহেতু উভয় গ্রন্থে ঈশ্বরের বাণী ধারণ করে আছে।
ইসলামে ইব্রাহিম, নূহ, মূসা ও ঈসাসহ বাইবেলে উল্লিখিত অন্যান্য আরো অনেককে তাদের নবী বলে স্বীকার করা হয় এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধা করা হয়। বিষয়গুলো কুরআন, বাইবেল ও তাওরাতে উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলমানদের উচিৎ খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের পবিত্র গ্রন্থকে সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করা।
কোরআনের চতুর্থ অধ্যায়ের ১৩৬ নং আয়াতে তাওরাত ও বাইবেলকে শ্রদ্ধা করতে আদেশ দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি এবং যেসব গ্রন্থ তিনি (আল্লাহ) তার রাসূলের উপর নাযিল করেছেন এবং যেসব বাণী তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। যারা আল্লাহ ও তার ফেরেশতা, তার কিতাবসমূহ, তার রাসূল ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস করবে না তারা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে।’
কোরআনে আল্লাহ বিশ্বজনীন এবং আল্লাহ সব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের জন্য সহনশীল।
ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে বিভিন্ন সংস্কৃতি শিখতে, জানতে এবং এসব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে মুসলমানদের উৎসাহিত করা হয়েছে।
কোরআনের ৪৯ অধ্যায়ের ১৩ নং আয়াতে লেখা আছে: ‘হে মানব, প্রকৃতপক্ষে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি পুরুষ এবং নারী হিসেবে এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পর সম্পর্কে জানতে পার। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহর দৃষ্টিতে আপনি সম্ভ্রান্ত যে, সর্বাধিক ধার্মিক। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবগত।’
এই আয়াতের মাধ্যমে শুধু মুসলিম নয়, আল্লাহ সব মানুষের কথাই বলেছেন। এতে আরো নিহিত রয়েছে যে, সকল মানুষ পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। যেহেতু আমাদের সবাই আদম এবং হাওয়া থেকেই এসেছি। এটা আরো জোর দেয় যে, আল্লাহ ইচ্ছাকৃতভাবেই মানুষকে বিভিন্ন রকমের সৃষ্টি করেছেন।
যদিও এর উদ্দেশ্য একজনকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর করে তৈরি করা নয় বরং উদ্দেশ্য যাতে আমরা একে অপরের কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করতে পারি।